Home
জাতীয় ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়, উত্কর্ষতা নিয়ে প্রশ্ন সরকারি কর্মচারী আইন।

নয় বছরে ব্যয় হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা। তবুও সরকারি কর্মচারী আইনের উত্কর্ষতা নিয়ে প্রশ্ন। তাই আইনটি করার প্রক্রিয়া কার্যত থেমে গেছে। সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের আইনের দ্বারা পরিচালনার বিধান রয়েছে। কিন্তু সে আইনটি দীর্ঘ ৪৬ বছরেও করা গেল না। ২০০৯ সাল থেকে সভা-সমিতি সেমিনার আর বিশেষজ্ঞের পিছনে ৫৬ কোটি টাকা ব্যয় করেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আইনের খসড়া তৈরিতে উত্কর্ষতা আনতে পারেনি। তাই মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরেও লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ আরও উত্কর্ষতা সাধনের প্রয়োজন বলে আইনের খসড়াটি জনপ্রশাসনে ফেরত দিয়েছে।
২০০৯ সালে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ও প্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের উদ্যোগে সরকারি কর্মচারীদের জন্য আইন করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। দীর্ঘ নয় বছর বৈঠকের পর বৈঠক করে আইনটির খসড়া তৈরি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আইনটি প্রণয়নে দাতা সংস্থার (ইউএনডিপি) অর্থে ৫৬ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়। ইতিমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আইনের খসড়া তৈরিতে বেশিরভাগ অর্থ খরচ হয়েছে পরামর্শক ফি এবং সভা-সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে। বাকি টাকার খরচ দেখানো হয়েছে কেনাকাটা ও কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণে।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর আইনটি নিয়মানুযায়ী ভেটিং-এর জন্য লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগে পাঠানো হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছিল। এ নিয়ে উভয় মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গত ৫ ডিসেম্বর সভা করেন। ১০ ডিসেম্বর খসড়ায় আরো উত্কর্ষতা সাধন প্রয়োজন এই কথা বলে ফেরত দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, ‘খসড়াটি ফেরত পাঠানোর পর এর বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা কাজ করছে’।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, তিন মাস পর্যালোচনা করে তারা আইনটি আরও উত্কর্ষ সাধন করা প্রয়োজন বলে ফেরত পাঠান। পরে তাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে চিঠি দেয়া হলে তারা কোনো উত্তর দেননি। তবে মৌখিক আলোচনায় তারা জানিয়েছেন, ফৌজদারি মামলা হলে কোনো কর্মচারীর গ্রেফতারের আগে সরকারের অনুমোদন লাগবে- এধারাটি তারা স্পষ্ট করতে বলেছেন। এছাড়া কিছু ভাষাগত দিক পরিবর্তনের জন্য বলেছেন। ফৌজদারি মামলা হলে কর্মচারীদের গ্রেফতারে সরকারের অনুমোদন লাগবে ধারাটি যুক্ত করা রয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, সরকারি কাজ করতে গিয়ে কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হলে আদালত চার্জশিট গ্রহণের আগে তাকে গ্রেফতার করতে হলে সরকারের অনুমোদন লাগবে। এখানে ভুল বুঝাবুঝির কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, ‘আইনটিতে কিছু বিষয়ে আরো নিবিড় পর্যালোচনা প্রয়োজন। এ জন্য কিছু জায়গা ঠিক করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তারা এগুলো ঠিক করে দিলে ভেটিং করা হবে’।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য আইন না থাকায় বিভিন্ন সরকার তাদের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার মাধ্যমে অস্থায়ী বিধি বিধান তৈরি করে চালাচ্ছে প্রশাসন। আর এর ফলে প্রশাসনে রাজনীতিকরণ করা থেকে অন্যায্য কাজকর্মও চলছে। এ নিয়ে প্রশাসনের একটি অংশের মধ্যে ক্ষোভ, অসন্তোষ লেগেই আছে।
১৯৭২ সালে সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘এই সংবিধানের বিধানবলী সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন ঃ তবে শর্ত থাকে যে, এই উদ্দেশ্য আইন দ্বারা বা অধীন বিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করিয়া বিধিসমূহ প্রণয়ন করার ক্ষমতা রাষ্ট্র্রপতির থাকিবে এবং অনুরূপ যে কোনো আইনের বিধানবলী-সাপেক্ষে অনুরূপ বিধিসমূহ কার্যকর হইবে’।
এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকার প্রশাসনকে গতিশীল করতে গত ২০০৭ সালে ইউএনডিপির সহায়তায় এই অ্যাক্টের খসড়া তৈরি করে। পরে এটি আর চূড়ান্ত হয়নি। মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আবার নতুন করে একটি আইন তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়। জনপ্রশাসন (সাবেক সংস্থাপন) মন্ত্রণালয় থেকে সিভিল সার্ভিস আইনের একটি খসড়াও তৈরি করা হয়। পরে এটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হলে এটি সংশোধন করে নতুন খসড়া তৈরির জন্য সচিব কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়। এ নির্দেশ মোতাবেক সচিব কমিটি ইতিমধ্যে ৭টি বৈঠক করে খসড়া চূড়ান্ত করে। পরে অজানা কারণে খসড়াটি বাতিল হয়।
পরে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় সিভিল সার্ভিস আইন নয় সরকারি কর্মচারী আইন তৈরি করা হবে। এ জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটি একাধিক বৈঠক, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম করে খসড়া চূড়ান্ত করে। পরে এটি গত বছরের শেষ দিকে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায়। আইনটি মন্ত্রিসভায় পাস হওয়ার পর বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা শুরু হয়।