

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁও (বিএনপি বাজার) এলাকায় অনুমোদনবিহীন একটি হাসপাতালের সন্ধান পেয়েছে র্যাব-২ পরিচালিত মোবাইল কোর্ট। ‘শাহজালাল জেনারেল হসপিটাল’ নামের এ হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার থেকে শুরু করে নার্স, টেকনেশিয়ান সবাই ভুয়া। আর এইসব অদক্ষ লোকই রোগীদের অপারেশন করাসহ নানা ধরণের চিকিত্সা সেবা দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। গতকাল শনিবার সকালে অভিযান চালিয়ে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয় মোবাইল কোর্ট। এছাড়া হাসপাতালের মালিক, ভুয়া ডাক্তারসহ ৬ জনকে জেল-জরিমানা করে। পরে তাদেরকে জেলে পাঠানো হয়।
দন্ডপ্রাপ্ত ভুয়া ডাক্তাররা স্বীকার করেন, ২৭/২ পশ্চিম আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ১০ বেডের এই হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। এরপর আর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। ৫ তলা ভবনের নীচতলায় এ হাসপাতাল। দেড় বছর ধরে অবৈধ এ হাসপাতালটিতে চলছে ভুয়া চিকিত্সকদের চিকিত্সা সেবা। দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে অপারেশন থিয়েটার। যন্ত্রপাতিও পুরাতন ও অপরিষ্কার। একটি মাত্র এক্সরে মেশিন বহু ব্যবহারে জীর্ণ। গ্রামের গোয়াল ঘরের পরিবেশ আর এ হাসপাতালের পরিবেশের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তারা জানান, কত রোগী এই ভুয়া চিকিত্সায় মারা গেছে সে তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে মাঝে মাঝেই তাদের হাসপাতালে চিকিত্সা নেয়া রোগীর মৃত্যু সংবাদ পেতেন।
অভিযানের সময় দেখা যায়, এইচএসসি পাশ মাসুম নামের এক ব্যক্তি এ হাসপাতালের মূল ডাক্তার। অপারেশনসহ সব ধরনের রোগী দেখা ও প্রেসক্রিপশন লেখার কাজ তিনি করেন। অভিযানের সময় অপারেশনের ৮ জন রোগী ছিল। অপারেশন থিয়েটারে রোগী ফজলুল হক (২৮) এর পায়ের অপারেশন চলছিল। এ সময় হাসপাতালে কোন ডাক্তার ছিলনা। হাসাপাতালের মালিক সুজন এবং তার চাচাত ভাই সুমন মিলে ফজলুল হকের পায়ে প্লাষ্টার করছিলেন। ফজলুল হক জানান, তিনি ডেকরেটরের দোকানে কাজ করেন। ভ্যান গাড়ীতে ডেকোরেটরের মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় প্রাইভেট কারের সাথে দুঘর্টনায় পা ভেঙ্গে যায়। পঙ্গু হাসপাতালে গেলে দালালরা তাকে এখানে নিয়ে আসে।
কেবিনে ভর্তি মিলন মোল্লা(২৮) নামে অপর এক রোগীর কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছে। তিনি জানান, তার পায়ে ইনফেকশন হয়ে গেছে। তাকেও পঙ্গু হাসপাতালের দালালরা এখানে নিয়ে আসে। ৬০ হাজার টাকা চুক্তিতে এখানে অপারেশন হলেও তার পা ভাল হয়নি।
পরে ভুয়া ডাক্তার মাসুম, সুমন ও হাসপাতাল মালিক সুজনকে হাতে-নাতে গ্রেফতার করা হয়। মাসুম ও সুজন এইচএসসি এবং সুমন এসএসসি পাশ করে এ কাজ করছে। এছাড়া এ হাসপাতালে নার্স পরিচয়ে কর্মরত মিতু জয়ের (২০) পেশাগত কোন রেজিষ্ট্রেশন নেই। সে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাশ করে এ কাজ করছে। কর্মরত টেকনিশিয়ান সুব্রত বালা(১৯) ও পঙ্কজ চন্দ্রও (২১) তাদের পেশাগত কোন প্রমাণপত্র কোর্টকে দেখাতে পারেনি। তাদেরকেও আটক করা হয়। পরে কোর্ট চিকিত্সার নামে প্রতারণার দায়ে ৩ জনকে দুই বত্সর করে কারাদন্ড এবং ভুয়া নার্স ও টেকনিশিয়ানদের ছয় মাসের কারাদন্ড ও প্রত্যেককে একলক্ষ টাকা করে জরিমানা করে এবং হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়। অভিযুক্ত সুজন জানায়, গত তিন বত্সর যাবত্ হাসপাতালটি এভাবেই চালাচ্ছিল তারা। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতর এ হাসপাতালের অনুমোদন দিলেও এর কার্যক্রম কিভাবে চলছে তা তদারকি করে দেখেনি। খোদ রাজধানীর বুকে এরকম ভুয়া হাসপাতাল চললেও সেই তথ্য অধিদফতরের নাই। অথচ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক নিয়মিত মনিটরিং করতে অধিদপ্তরের একটি বিভাগ রয়েছে। কিন্তু ঐ বিভাগ তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। তারা শুধু মোটা অংকের উেকাচের বিনিময় লাইসেন্স দিয়েই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ভুয়া হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে এই অভিযান চলবে। এসব ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেউ যদি জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।