সজীব জয়ের জন্মদিনে শুভেচ্ছাসহ কিছু কথা।আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

62

4_28246

newsআমার দীর্ঘকালের ব্যক্তিগত ও সাংবাদিক বন্ধু এ.বি.এম. মূসা এখন আর ইহজগতে নেই। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার এক সময়ের একটি মন্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে আজকের লেখাটি শুরু করছি। আজ (২৭ জুলাই) শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সেই দুর্যোগময় দিনগুলোতে জয়ের জন্ম। জয় এখন ৪৩ বছরের যুবক। একজন প্রযুক্তি বিজ্ঞানী। প্রধানমন্ত্রী এবং মা শেখ হাসিনার আইটি এডভাইজার। অঘোষিত রাজনৈতিক উপদেষ্টাও কিনা তা জানি না। তার জন্মদিনে বন্ধুবর মূসার মন্তব্যটি মনে পড়লো এজন্যেই যে, মূসা এক সময় তাঁর কলামে বাংলাদেশের আরেক পরিবারের আরেক তরুণকে “বাংলার তারুণ্যের ভবিষ্যত্” বলে অভিহিত করেছিলেন। আমি তার সঙ্গে সহমত পোষণ করতে পারিনি। আমার মতে, সেই যুবককে বরং মীরজাফর পুত্র মীরনের সঙ্গে তুলনা করা যায়। সেই রকম দুর্বিনীত, উদ্ধত, ষড়যন্ত্রকারী এবং ঘাতক চরিত্রের। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতীক সে হতে পারে না।

 

সেদিনই আমার মনে প্রশ্ন জেগেছিল, তাহলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারুণ্যের ভবিষ্যত্ বলে ভাবা যায়? ভাবতে আমার ভয় লেগেছে। জয়ের বাবা ছিলেন পরমাণু-বিজ্ঞানী। ছেলে প্রযুক্তি বিজ্ঞানী, মা রাজনীতিক। তার উপর কার প্রভাব বর্তাবে? বাবার না মায়ের? বাবার প্রভাব যে বর্তেছে তার প্রমাণ জয় বিজ্ঞানমুখী হয়েছেন, রাজনীতিমুখী হননি। মা তাকে চেষ্টা করছেন রাজনীতিতে আনার। মাকে সাহায্য করতে জয়ও এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি রাজনীতিতে আগ্রহী হবেন কি, রাজনীতিতে থাকবেন কি?

 

আমরা চাই বা না চাই, উপমহাদেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বের উত্তরাধিকার এখনো পরিবারতন্ত্রের হাতে। নইলে এতবড় ভারতে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত এবং রাজনীতিমনস্ক যুবক থাকতে নেহেরু-গান্ধী পরিবারতন্ত্রের রাহুল গান্ধীকে কংগ্রেসের নেতা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে বসানোর জন্য এতো হুড় হাঙ্গামা চলতো না। গুজরাতের নরেন্দ্রনাথ মোদী এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় অনেকে ভাবছেন ভারতে পরিবারতন্ত্রের অবসান হলো। হলে ভালো। আমার ধারণা, গোটা উপমহাদেশেই পরিবারতন্ত্রের অবসানের সময় আসন্ন হতে পারে, কিন্তু এখনো আসেনি। নরেন্দ্র মোদী একটি বিরতি মাত্র। তারপর আবার ভারতের নেতৃত্বে নেহেরু গান্ধী পরিবারের রাহুল কিংবা প্রিয়াংকা কেউ উঠে আসবেন।

 

বাংলাদেশে পরিবারতন্ত্র একটি নয়, দু’টি। একটি ভুঁইফোড়, অন্যটি খাঁটি। ভুঁইফোড় পরিবারটির কোনো ভবিষ্যত্ আছে তা আমি মনে করি না। অন্য পরিবারটির আছে। এজন্যে শেখ হাসিনার পর ছোট বোন শেখ রেহানার রাজনৈতিক নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনার কথা কেউ কেউ ভাবছিলেন। শেখ রেহানা নিজেই সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি গৃহী জীবনই যাপন করতে চান। আমি একবার প্রস্তাব দিয়েছিলাম রেহানাকে আওয়ামী লীগের নির্বাহী সভানেত্রী পদে বসানোর। হাসিনা বলেছিলেন, আপনি চেষ্টা করে দেখুন। রেহানাকে রাজি করাতে পারিনি। গত বুধবারেও (২৩ জুলাই) লন্ডনে শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে (রেহানাও উপস্থিত ছিলেন) এক সাংবাদিক হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, রেহানাকে সক্রিয় ও প্রকাশ্য রাজনীতিতে নামানোর। রেহানা দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

 

আমার ধারণা, শেখ হাসিনা রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করতে চাইলে শেখ রেহানা বরং সজীব জয়ের জন্য নেতৃত্ব গ্রহণের দরোজা খুলে দিতে চাইবেন। নিজে সক্রিয় রাজনীতিতে আসবেন না। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, সজীব জয় নিজে এই নেতৃত্ব গ্রহণ করতে এবং নিজেকে ষোল আনা রাজনীতিক বানাতে চাইবেন কিনা? এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে গেলে ভারতের রাজীব গান্ধীর কথা আমার স্মরণ হয়। ইন্দিরা গান্ধীর দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে রাজীব গান্ধী মোটেই রাজনীতিতে আগ্রহী ছিলেন না। তিনি কেমব্রিজে উচ্চশিক্ষা লাভ করলেও বিমান চালকের (পাইলট) জীবন বেছে নিয়েছিলেন এবং ইতালিয়ান মেয়ে সোনিয়াকে বিয়ে করে গৃহবধূ করেছিলেন।

 

কিন্তু সেই রাজীবকে রাজনীতিক হতে হয়েছিল। ছোট ভাই সঞ্জয় গান্ধী বিমান দুর্ঘটনায় আকস্মিকভাবে মারা গেলে মা ইন্দিরা অনিচ্ছুক বড় ছেলে রাজীবকে রাজনীতিতে টেনে এনেছিলেন। দেহরক্ষীদের গুলিতে ইন্দিরা মারা গেলে রাজীব হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং কংগ্রেসের নেতা। নেহেরু, ইন্দিরার হাতে গড়া কংগ্রেসের চরিত্রে তখনই পরিবর্তন শুরু হয়। কংগ্রেস এবং কংগ্রেস সরকার দুই-ই রাজনৈতিক চরিত্র হারাতে থাকে এবং তাতে বুরোক্রাট ও টেকনোক্রাটদের প্রাধান্য ও প্রভাব বাড়তে থাকে। ইউরোপ-আমেরিকার কাগজগুলোতে তাকে ভারতের টেকনোক্রাট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিনন্দন জানানো হয়।

 

বাংলাদেশেও শেখ ফজলুল হক মনি, শেখ কামাল, শেখ জামালের মর্মান্তিক মৃত্যু না হলে বঙ্গবন্ধুর পর দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুরুভার কার কাঁধে বর্তাতো তা অনুমান করা কষ্টকর নয়। মনি, কামাল, জামাল বেঁচে থাকলে শেখ হাসিনার হয়তো রাজনীতিতে আসার বা রাজনৈতিক উত্তরাধিকার গ্রহণের প্রশ্নই উঠতো না, সজীব জয়ের তো নয়ই। ইতিহাস-বিধাতা নিজেই তাদের হাত ধরে রাজনীতিতে এনেছেন। সজীবের পিতা বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়া রাজনীতিতে আগ্রহী ছিলেন না, সজীবও নন। মা হাসিনা সম্ভবত ভারতের ইন্দিরা যেমন অনিচ্ছুক রাজীবকে রাজনীতিতে টেনেছিলেন, তেমনি সজীবকে রাজনীতিতে টানছেন। সজীব টেকনোক্রাট থেকে কি রাজনীতিক হতে পারবেন, না রাজীবের মতো টেকনোক্রাট পলিটিশিয়ান হতে চাইবেন? যদি চান, তাহলে বাংলাদেশে পরিবারতন্ত্রের অবসান না হলেও রাজনীতিতে এবং রাজনৈতিক দলে আরও বড় পরিবর্তন আসতে পারে।

 

রাজীব টেকনোক্রাট ছিলেন, কিন্তু রাজনীতি তেমন বুঝতেন না। বুঝলে তার আমলে অতো বড় শিখ নিধন দাঙ্গা হতো না। কংগ্রেস দল রাজনৈতিক চরিত্র হারাতে শুরু করতো না এবং প্রশাসনে বুরোক্রেসি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে দেশ দুর্নীতিতে ভরে ফেলতে পারতো না। নেহেরুর সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের মিশ্র অর্থনীতি এবং ইন্দিরার গরিবি হটাও কর্মসূচি ভারতের রাজনীতিতে যে বিগ বিজনেসের একাধিপত্য বিস্তার রোধ করে রেখেছিল, রাজীব নেহেরু ও ইন্দিরার পথ থেকে সরে এসে সেই পথ বিগ বিজনেসের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।

 

রাজীব বিদেশে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন। বিদেশি পত্নী গ্রহণ করেছেন। দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তার নিবিড় পরিচয় ছিল না। তিনি টেকনোক্রাসি দ্বারা ভারতের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাবেন ভেবেছিলেন। চেষ্টা তিনি করেছিলেন, সেই উন্নয়নকে তিনি মানুষের জীবনে ও মাটির শিকড়ে প্রোথিত করতে পারেননি। কেবল টেকনোক্রাসি দ্বারা দেশের উন্নয়ন ঘটানো যায় না। টেকনোক্রাসির সঙ্গে ডেমোক্রেসির মানুষের ও মাটির শিকড়ের সমন্বয় ঘটাতে হবে। নইলে উন্নয়ন হবে শুধু মাথার, সর্ব অঙ্গের নয়। মাথা মোটা উন্নয়ন দ্বারা সাধারণ মানুষের উন্নয়ন হয় না।

 

বাংলাদেশের সজীব জয়ও একজন মেধাবী টেকনোক্রাট। রাজীবের চাইতেও সজীবের লেখাপড়া সবসময়ই বিদেশে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনাকে দীর্ঘকাল দেশে-বিদেশে প্রায় নির্বাসিত জীবন-যাপন করতে হওয়ায় দুই ভাই-বোন সজীব ও পুতুলকেও লেখাপড়া শিখতে হয়েছে বিদেশে। কখনো নৈনিতাল, কখনো কোদাই ক্যানেল, কখনো আমেরিকায় সজীব জয়ের লেখাপড়া ও উচ্চশিক্ষা। তিনিও বিদেশি স্ত্রী গ্রহণ করেছেন। দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তার পরিচয় কম। বঙ্গবন্ধু বলতেন, “আমি আকাশ থেকে নেমে নেতা হইনি; রাজপথে চুঙ্গা ফুঁকিয়ে নেতা হয়েছি।” ফলে তিনি হয়েছিলেন দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ জননেতা।

 

উন্নয়নশীল বাংলাদেশে এই চুঙ্গা ফুঁকিয়ে রাজনীতি শেখার এখনো দরকার আছে। নইলে মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হবে না, প্রকৃত রাজনীতি করা যাবে না। সজীব জয়কে তার মাতা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক নেতৃত্বের উত্তরাধিকার গ্রহণ করতে হলে তার টেকনোক্র্যাসি সংক্রান্ত মেধাকে দেশের মাটির রসের রাজনীতির সঙ্গে মেশাতে হবে। নইলে কেবল টেকনোক্র্যাসি দ্বারা দেশের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটানো যাবে না। সুতরাং এটাই সময়। ৪৩ বছরের যুবক সজীব ওয়াজেদ জয়ের উচিত দেশে অবস্থান করা। মাটি ও মানুষের সঙ্গে দ্রুত নিজেকে সম্পৃক্ত করা। দেশের রাজনীতি সম্পর্কে নিজেকে অভিজ্ঞ করে তোলা। যাতে পুরোপুরি রাজনীতিতে নামলে ভারতের রাজীব পুত্র রাহুল গান্ধীর মতো নিজেকে অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ বলে পরিচয় দিতে না হয়।

 

আমি ভারতের রাহুল গান্ধীর চাইতে আমাদের সজীব ওয়াজেদ জয়কে অনেক বেশি স্মার্ট ও মেধাবী মনে করি। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের মতো প্রাচীন, ফসিল হয়ে ওঠা জীর্ণ গাছে তিনি এই বয়সে “ডিজিটাল বাংলাদেশের” সবুজ পাতা গজিয়েছেন, বাংলাদেশের চরম হতাশাগ্রস্ত তরুণ প্রজন্মের মনে ডিজিটাল বাংলার নতুন স্বপ্ন বুনতে পেরেছিলেন। এটা কম বড় কৃতিত্ব নয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট বাক্সে তরুণ প্রজন্মের ভোটদাতাদের প্রচুর ভোট পড়েছিল এবং আওয়ামী লীগ বিশাল জয়ের অধিকারী হয়েছিল, এই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন তৈরি তার একটা বড় কারণ।

 

কিন্তু এই স্বপ্নের চারা বেশিদিন বাঁচতে পারে না, যদি তাতে নিত্য মাটির রস জোগানো না যায়। জয়কে এই সত্যটা বুঝতে হবে, জানতে হবে। তিনি এখন দেশে ফিরে এসে জনসংযোগ সভা সম্মেলন করছেন এটা খুবই আশার কথা। কিন্তু কেবল দেশব্যাপী এক লাখ ওয়াইফাই জোনস প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি ঘোষণা এবং স্কুল-কলেজে টেলিটকের থ্রি জি ইন্টারনেট সার্ভিস ও কম্পিউটার ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা দ্বারা তিনি সাধারণ মানুষকে এই মুহূর্তে উজ্জীবিত করতে পারবেন না। পীরগঞ্জ উপজেলায় পীরগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক জনসভায় তিনি বলেছেন, ডিজিটালাইজেশন প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের দ্বারা দেশ ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। পুত্রের একথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে তার সংবাদ সম্মেলনেও বলেছেন।

 

এটা স্বপ্নের পোলাউ। এই স্বপ্ন একদিন হয়তো বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু তার আগে দরকার দেশের সাধারণ মানুষের আশু কিছু সমস্যার সমাধান। কৃষক মরিচ, পাট, ধান বুনে তার ন্যায্য দাম পাবে কিনা, চাষবাসের সময় কমদামে সার পাবে কিনা, কৃষিপণ্য বেচে তার বছরের খোরাকির টাকা আয় করতে পারবে কিনা, রাতে ডাকাত, দিনে ছিনতাইকারীর অত্যাচার থেকে বাঁচবে কিনা, দরকারের সময় চিকিত্সা ও ঔষধ পাবে কিনা; সন্ত্রাস ও দুর্নীতির থাবা থেকে তারা মুক্ত থাকতে পারবে কিনা, এমপি ও তাদের স্বজনদের অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ হবে কিনা, সরকার বিনামূল্যে যে পাঠ্যপুস্তক দিচ্ছেন, তা কালোবাজারে কিনতে বাধ্য হওয়া বন্ধ হবে কিনা; গ্রামের বেকার তরুণদের জীবিকার্জনের উন্নত ব্যবস্থা হবে কিনা, দেশের রাস্তাঘাটগুলোর উন্নতি হবে এবং যান দুর্ঘটনায় নিত্য মৃত্যুবরণ রোধ হবে কিনা ইত্যাদি নানা প্রশ্ন এখন জনগণের মনে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়তো একদিন জনজীবনের অনেক সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু ভবিষ্যতের সেই স্বর্গসুখের আশ্বাস মর্ত্যের মানুষতো এখন নিত্য যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে না। আগামীকাল পোলাউ খাওয়াবো এই আশ্বাস দিয়েতো বুভুক্ষু সন্তানের আজকের বুভুক্ষা নিবারণ করা যায় না।

 

বাংলার তরুণদের সামনে তাই শুধু ভবিষ্যতের স্বপ্ন নয়, বর্তমানে বেঁচে থাকার মতো একটি কর্মসূচি তুলে ধরতে হবে। সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে দৈনন্দিন সমস্যা মুক্তির একটা আশু কর্মপন্থা। এবং সেই কর্মপন্থায় দেশের মানুষকে যুক্ত করতে হবে। ঢাকাকে যানজট মুক্ত করতে হলে শুধু নতুন প্রযুক্তি দ্বারা অসংখ্য ফ্লাইওভার তৈরি করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন হবে।

সমস্ত অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকায় না রেখে বিভিন্ন বড় শহরে ছড়িয়ে দিতে হবে। জয় দীর্ঘকাল আমেরিকায় বসবাস করে এই প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের কর্মপন্থা দেখে এসেছেন। নিউইয়র্ক শহরকে কি করে অপরাধ নগরীর কুখ্যাতি থেকে রাতারাতি মুক্ত করা হয়েছিল সেই কর্মসূচির কথা তিনি জানেন। আরো নিশ্চয়ই জানেন, প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার জন্য কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডু কি কর্মপন্থা গ্রহণ করেছিলেন?

 

সজীব ওয়াজেদ জয় যখন একজন বিজ্ঞানী, তখন বিজ্ঞান মনস্কের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে তাকে দেশের আশু সমস্যাগুলোর দিকে তাকানোর অনুরোধ জানাই। কৃষি উত্পাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। এমনকি কৃষিপণ্য উদ্বৃত্ত হচ্ছে। এটা প্রযুক্তির জয়। কিন্তু এই জয়ে কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছে কি? অসাধু ব্যবসায়ীদের চক্রান্তে চাষি তার পণ্যের সঠিক দাম পাচ্ছে কি? কৃষিপণ্যের সঠিক মার্কেটিং দ্বারা দেশ লাভবান হচ্ছে কি? বিদেশে দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিক সরবরাহের ব্যাপারেও আধুনিক ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা দরকার। ওল্ডস্টাইল দুর্নীতিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা দ্বারা দেশের ছোট-বড় কোনো সমস্যারই সমাধান করা যাবে না। এখানে চাই নতুন যুগের নতুন দৃষ্টিভঙ্গীর তরুণ নেতৃত্ব। এই নেতৃত্ব সজীব ওয়াজেদ দিতে পারেন, যদি তিনি তার প্রযুক্তি বিজ্ঞানের মেধার সঙ্গে দেশের মাটি ও মানুষ সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা যুক্ত করতে পারেন। এই অভিজ্ঞতা তাকে অর্জন করতে হবে। এই অভিজ্ঞতা ছাড়া কেবল একজন টেকনোক্রাট হিসেবে প্রযুক্তি বিজ্ঞানের মেধা দ্বারা তিনি বাংলাদেশের তারুণ্যের ভবিষ্যত্ হয়ে উঠতে পারবেন না; বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক নেতৃত্বের উত্তরাধিকারও গ্রহণ করতে পারবেন না।

 

তার এবারের জন্মদিনে প্রার্থনা করি, প্রযুক্তি বিজ্ঞানের মেধার সঙ্গে তিনি যেন প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনীতির অভিজ্ঞতা অর্জন করে একজন দক্ষ এবং অভিজ্ঞ টেকনোক্রাট-রাজনীতিক হয়ে ওঠেন এবং বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক নেতৃত্বের উত্তরাধিকার গ্রহণ করতে পারেন। তার দীর্ঘ নিরাপদ জীবন কামনা করি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here