যোগাযোগের নতুন দিগন্ত

113

 

ঢাকা এককোটি সত্তরলক্ষমানুষ অধ্যুষিত পৃথিবীরঅন্যত মঘনবসতিপূর্ণশহর।২০২৫সালের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে আড়াই কোটি।উত্তরা, টঙ্গী, জয়দেবপুর এবং গাজিপুরমিলিয়ে প্রায় এককোটিমানুষের বাস।এখানে রয়েছে অসংখ্য কারখানা, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন দপ্তর এবং বাংলাদেশ ধানগবেষণা ইনিস্টিটিউট, যেকারণে এখানে লোকালয়ের একটা বড় অংশই বাসকরে। এখানে ভেতরের রাস্তাগুলোখুবসরু,কেবলমাত্র রিক্সাএবং যান্ত্রিক রিকশা গুলোই মূলতঃ এসব রাস্তায় চলাচল করতে পারে।বর্ধিষ্ণু জন সংখ্যার এই চাপ বর্তমানে নিরাপদ গন পরিবহনের দাবী কে সামনে নিয়েএসেছে।নিম্নগামী যাত্রীসেবা , কষ্টকর প্রাত্যাহিক যাত্রা এবং পরিবহন নিয়ন্ত্রণের অদক্ষতা গনপরিবহনের এই দুরবস্থারকারণ।পরিবহন খাতের অবকাঠামো উন্নয়ণ এখন কর্তৃপক্ষের জন্য সবচেয়ে জরুরী হয়ে পড়েছে।দু’হাজার ষোলোসালে ঢাকার জন্য রিভাইজড স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্টপ্ল্যান, (আরএসটিপি)দু’টি বাস রাপিড ট্রানযিট (বিআরটি)এবং পাঁচটি মেট্রো রেইল লাইনের পরামর্শদেয়।এইঅবকাঠামোর মধ্যেএবংএডিবি ও এএফডির অর্থায়নে বিআর টিলাইন থ্রিরউত্তরঅংশটি,  গাজি পুর হতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হবে।বাস রাপিড ট্রান্সজিট (বি.আর.টি)বাসেরজন্য সুনির্ধারিত রাস্তাসহ একটি উন্নত মানের বাসের বাব্যবস্থা।পৃথিবীর বহু শহরে সকল শ্রেণীরমানুষের চলা চলের জন্য এইধরনেরউন্নতমানের গন পরিবহন রয়েছে। প্রকল্পের প্রথম করিডোরটি  উত্তরা, টঙ্গী, জয়দেবপুরএবংগাজিপুর পর্যন্ত, যার দৈর্ঘ বিশদশমিকপাঁচকিলোমিটার  এবং প্রায় এক কোটি অধিবাসীকে সেবা প্রদান করবে। এই বিআরটি প্রকল্পেএয়ারপোর্টটার্মিনাল থেকে গাজিপুর পর্যন্ত উভয় মুখে একটি করে রাস্তা থাকবে। রাস্তা গুলোকে সর্বোচ্চ চওড়া করে অতিরিক্ত স্থান সংকুলান করা হবে। এই প্রশস্ততার কারণে সুনির্ধারিত পথে চলা বিআরটি বাসগুলো  অন্যযান বাহন গুলোর গতি রোধকরবেনা। ঢাকাবিআরটি সামগ্রিকট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ণ ঘটিয়ে ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতার সূচক ঊর্ধ্বগামী করবে। যেমন অযান্ত্রিক এবং যন্ত্রচালিত যানবাহন গুলোর জনন্য পৃথক সড়ক, একশত তেরোটি সংযুক্তসড়ক, রাস্তার দু’ধারে পর্যাপ্ত শক্তিসাশ্রয়ী সড়কবাতি এবং ফুটপাথের নিচে উচ্চ ধারণক্ষমতা সম্প্ন্ননর্দমা তৈরী করা হবে।দক্ষট্রাফিকপ্রবাহনিয়ন্ত্রণেরজন্য ব্যস্ত জংশনগুলোতে নির্মাণকরাহবে ছয়টি উড়ালসেতু।

ঢাকা বিআরটি এই প্রকল্পে  এয়ার পোর্ট টার্মিনাল হতে গাজিপুর টার্মিনাল পর্যন্ত নিয়মিত এবং দ্রুত গামীবাসের জন্য       পচিঁশ টি  স্টেশন নির্মাণ করবে। যাত্রীগন গড়ে প্রতি সাতশত পঞ্চাশমিটারের মধ্যেই একেক টিস্টেশন পাবেন। যাত্রীরা আরামদায়ক ওনিরাপদফুট ওভার ব্রীজদিয়ে স্টেশনে যেতেপারবেন।এরমধ্যেস্বয়ংক্রিয়সিঁড়িএবংমহিলা, প্রতিবন্ধিএবংবয়স্কযাত্রীদেরজন্যলিফটেরব্যবস্থাওথাকবে। প্রকল্পটি চালু হওয়ার সময় প্রায় দুলক্ষ পঞ্চাশ হাজার যাত্রী প্রতিদিন এই সুবিধে ভোগ করবেন যদিও প্রকল্পটি সবোর্চ্চ চার লক্ষ যাত্রীকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা রাখবে। যাত্রীদের পরমসুবিধে দেওয়ার জন্যই-টিকেটের ব্যবস্থা থাকবে। বাসে ওঠার জন্য যাত্রীদের আগে থেকেই স্টেশনের কাউন্ডার থেকে টিকেট কেটে রাখতে হবে।স্টেশন গুলোতে উচ্চ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, তথ্য  প্রদর্শণ  এবং তথ্য ঘোষনার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও যাত্রীদের রক্ষার  জন্য থাকবে ইলেকট্রনিক গেট এবং বাসের অপেক্ষার জন্য যথেষ্ট জায়গা। দ্রুতগামী এক্সপ্রেস সেবার  জন্য স্টেশন গুলোতে বাইপাশ লেন থাকবে।উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বাস গুলোতে  মহিলা, বয়স্কএবং প্রতিবন্ধিদের জন্য বিশেষ আসনের ব্যবস্থা থাকবে।এলইডি প্যানেল পরবর্তীস্টেশনের নাম, সময় এবং বাইরের আবহাওয়ার ঘোষনা দেবে। বাস এবং নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকবে যেখানথেকে জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমেবাসের অবস্থানপর্যবেক্ষন করা যাবে। হাউজবিল্ডিং এবং চেরাগ আলীর মধ্যে প্রায় সাড়েচার কিলোমিটারের একটি উত্তোলিত অংশনির্মিতি হবে। যাত্রীরাস্বয়ংক্রিয় সিঁড়ি দিয়েনিচ থেকে উপরের স্টেশনেওঠানামা করতে পারবে।চারলেনের টঙ্গীব্রীজকে আট লেনে উন্নীত করা হবে, যার মধ্যে উভয় মুখী দু’টি লেন বিআরটি বাসের জন্য সুনির্ধারিত। টঙ্গী ব্রীজ থেকে আব্দুল্লাহ   পুরের দিকে আশুলিয়াসড়কটির সাথেসংযুক্ত থাকার    জন্য একটি রাম্প নেমে যাবে।  বিআরটি প্রকল্পটি ময়মনসিংহগামী সড়কটিকে প্রশস্ত করার প্রস্তাবনায় জয়দেবপুর ইন্টারসেকশনটিকে নতুনরূ পদানকরবে।

বিআরটি বাস গুলোর জন্য গাজিপুরের কাছে একটি বাসডিপো ইতোমধ্যে নির্মিতহয়েছে। ডিপোটিতেবাসপার্কিং  এবং রক্ষণা বেক্ষনের সুবিধে রয়েছে।এছাড়াওএখানেবাসগুলোতে জ্বালানী নেওয়া এবং ড্রাইভারদের বিশ্রাম নেওয়ার  সুবিধা রয়েছে। প্রধান দু’টি টার্মিনালেরঅবস্থান হবে বিমানবন্দর এবং গাজিপুরে।টার্মিনাল গুলোতেকার, অটোরিক্সা এবং রিক্সারজন্য পার্কিং এবং যাত্রী ওঠা নামার জায়গার ব্যবস্থা থাকবে। টার্মিনাল গুলোতে প্রশাসনিকএবং যাত্রীদের সেবা নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা  থাকবে। এছাড়াও বাসগুলির নিয়মিত   প্রত্যাহিক রক্ষনাবেক্ষনের  জন্য   অভ্যন্তরীন জায়গা থাকবে। বিআরটি সিস্টেম ঢাকা শহরে একটি নতুন যোগাযোগ সংস্কৃতি গড়ে তুলবে।পরিববহন সংক্রান্ত উন্নয়নের ফলে আবাসিক ওবানিজ্যিক  উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনা তৈরীহবে যা উত্তরা হতে গাজীপুরএলাকাটিকে অধিবাসী    এবং দর্শনার্থীদের কাছে আরও আকর্ষনীয় করে তুলবে। একটি অপারেশন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ প্রতি মুহূর্তে প্রতিটি বাসের অবস্থানএবংগতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করবে। এছাড়াও অপারেশন কক্ষ নিয়ন্ত্রিত সিসিটিভি  দ্বারাবাসের রাস্তা এবং   স্টেশনগুলোর প্রতি সার্বক্ষণিক লক্ষ্য রাখা হবে।

এসব লক্ষ্য সামনে রেখে ২০১৩ সালে আত্মপ্রকাশ করেছে সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানাধীন ঢাকা বিআরটি কোম্পানী লিমিটেড। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন পরবর্তী পরিচালনারদায়িত্বে থাকবে ঢাকাবিআরটি। ’ঢাকা লাইন’ নামে ইতোমধ্যে বিআরটি বাস বহরের নাম এবং লোগো সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছে। সম্প্রতি কোম্পানীর কার্যক্রমে গতিবৃদ্ধিতে একজন পূর্ণকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন। কোম্পানীর সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব শফিকুল ইসলাম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের নির্মান কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আশা করা হচ্ছে ২০২২ সালের জুন নাগাদ জনসাধারণের জন্য বিআরটি সেবা উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে।

নিশ্চিতভাবেই এই প্রকল্পটি শহরের আধুনিকায়নের জন্য একটি অবিচ্ছিন্ন সমাধান এবং একুশ শতাব্দীর ঢাকা বিনির্মাণের একটিঅত্যাবশ্যক ধাপ।যে শহরটিহবে পরিচ্ছন্ন, শান্তএবংসুখীনাগরিকদেরনিজস্বঠিকানাযারা হবেন ঢাকা শহরের বৃহত্তর উন্নয়নের অংশীদার।

(তথ্যের জন্য ঢাকা বিআরটি কোম্পানীর ওয়েবসাইট www.dhakabrt.com ভিজিট করুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here