মিয়ানমার পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন রোহিঙ্গারা

120

জনতার নিউজ

মিয়ানমারের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। এ নিয়ে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। রোহিঙ্গা নেতাদের দাবী মিয়ানমারে বর্তমানেও ৬ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা রয়েছে। সেখানকার সেনাবাহিনী কর্তৃক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জবর দখলের ঘটনা নিয়ে ওইসব রোহিঙ্গাদের মাঝেও বিরাজ করছে ভীতিকর পরিবেশ। তাই এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

 

 

১৯৯১ সালে সীমান্তের নাফনদী পার হয়ে কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নেতা (রেজিস্টার্ড) হাফেজ জালাল আহমদ তার ব্যক্তিগত মতামত ব্যক্ত করে বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চীন সরকার যখন বাংলাদেশ মিয়ানমার দু’দেশের প্রতিনিধিদের সাথে কূটনীতিক তৎপরতা চালিয়ে একটি নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছে ঠিক সেই মুহূর্তে মিয়ানমার সামরিক জান্তা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তাদের দখলে নিয়ে নেয়। তারা মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে অং সান সুচি ও প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে দেশটির রাজনীতিতে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে এ মুহূর্তে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হতে পারে। তবে সরকারের চলমান কূটনীতিক তৎপরতায় মিয়ানমারের সামরিক সরকার যদি রোহিঙ্গা ফেরত নিতে আশ্বস্ত করে তাহলে উখিয়া টেকনাফে বসবাসরত রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে আগ্রহী।

 

 

 

 

 

 

২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের একটি অংশ সীমান্তের ঘুমধুম কোনারপাড়া জিরো পয়েন্টে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও অং সান সুচি একই সূতায় গাঁথা। এতে আমাদের খুশি ও দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। তবে সবচেয়ে খারাপ লাগছে যখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা সামনে আসে, তখন মিয়ানমার সরকার কোনও না কোনও অজুহাত তুলে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করে। তাদের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না।

 

মিয়ানমারে সৃষ্ট ঘটনায় দেশটির ভেতরে থাকা রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা আয়ুব আলী মাঝি বলেন, ‘টেলিভিশনে মিয়ানমার পরিস্থিতি দেখেছি। অং সান সুচির এই পরিণতি তার বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলে আসলেও ক্ষমতার মোহে আমাদের আগুনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। বিশ্ব দরবারে আমাদের বিপক্ষে কথা বলেছেন।’ যে কারণে আজ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে শরণার্থী হয়ে পরবাস জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত রোহিঙ্গাদের বিদ্যমান পরিস্থিতি কবে নাগাদ শান্ত হয় তা বলা যাচ্ছে না। এ নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিপদগামী হয়ে অনেকেই জড়িয়ে পড়েছে অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে।

 

 

 

 

 

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের টিভি টাওয়ার সংলগ্ন ৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘মিয়ানমারের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখবে ধারণা করলেও তা এখন অনিশ্চিত। কারণ, মিয়ানমার সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনো কথা কর্ণপাত করছে না।’ এক ঘেয়েমি মনোভাব নিয়ে তাদের মনোবাসনা চরিতার্থ করতে গণতন্ত্রের উপর আঘাত করছে। এতে প্রত্যাবাসনতো দূরের কথা সেখানে বসবাসরত ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদেরও কোন নিরাপত্তা নাই। তারাও যেকোনো সময়ে নিরাপদ আশ্রয়ের তাগিদে এখানে চলে আসতে পারে।

 

একই কথা বলেছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা আবু সৈয়দ, উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আমান উল্লাহ, ফয়েজ উল্লাহ মাঝি, হামিদ মাঝি, উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মৌলভী জাফর আলম, থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাস্টার আবদুল মান্নান, কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আবু তাহেরসহ অনেক রোহিঙ্গা মাঝি ও কমিউনিটি নেতা।

 

 

 

এদিকে, মিয়ানমারের সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কোনও ধরনের প্রভাব পড়েনি বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতিতে মন্তব্য করার মতো কোনও পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয়নি। তবে সীমান্তে বিজিবির সদস্যরা আগে থেকেই সতর্ক ছিলো, এখনো রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here