
রাজ-রাজাদের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, সিংহাসনের জন্য পুত্র পিতাকে হত্যা করেছে। বন্দী করেছে। মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাসে সম্রাট শাজাহানকে সিংহাসনের জন্য তাঁর পুত্র আওরঙ্গজেব বন্দী করেছিল। আধুনিক যুগেও কি মুঘল সাম্রাজের ঘটনা পুণরাবৃত্তি ঘটছে? বেগম খালেদা জিয়া কি তাঁর সন্তানের হাতে গৃহবন্দী? কথাটা এখন চাউর হয়েছে বিএনপির মধ্যেই। বেগম জিয়া লন্ডনে গেছেন প্রায় দুমাস। এখন পর্যন্ত তিনি দলীয় নেতা কর্মীদের কোনো আনুষ্ঠানিক সমাবেশে উপস্থিত হননি। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির কোনো নেতাও তাঁর সাক্ষাৎ পাননি। এর মধ্যে বেগম জিয়ার কথিত জন্মদিন গেছে, তাঁর কারামুক্তি দিবস গেলো, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পার হয়ে গেছে। এই সব কোনো দিবসেই বিএনপির লন্ডন শাখা কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি।
লন্ডন বিএনপির এক নেতা বলেছেন, ‘ম্যাডাম লন্ডনে তাঁকে ছাড়া আমরা কর্মসূচি করি কীভাবে?’ তবে তথানুসন্ধানে দেখা গেছে, তার এই বক্তব্য পুরোপুরি সত্য নয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে লন্ডন বিএনপি এক স্মরণসভার আয়োজন করেছিল। দুই পক্ষের মারামারি আর হাতাহাতিতে স্মরণসভা পণ্ড হয়ে যায়। লন্ডনে বিএনপির মতবিরোধ অনেক দিনের। যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি এম এ মালেকের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক এম কয়সর আহমেদের বিরোধ রয়েছে। তবে সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সহ-সভাপতি আক্তার হোসেনের বিরোধ প্রকাশ্যে। বলা হচ্ছে, এই বিরোধের জন্যই বেগম জিয়া প্রকাশ্যে সমাবেশ করছেন না। কিন্তু লন্ডনের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বেগম জিয়া একটা সমাবেশে যোগ দেবেন, যতই কোন্দল থাকুক সেখানে কেউই গোলযোগ করবে না। অতীতেও করেনি। এ প্রসঙ্গে ওই সূত্রগুলো এর আগে লন্ডন সফরে বেগম জিয়ার একাধিক সমাবেশ করার উদাহরন দেয়। তাঁদের মতে, এরচেয়ে বেশি বিরোধ তখন ছিল।
লন্ডনে গিয়ে বেগম জিয়া তারেক জিয়ার চোখের নাগালের বাইরে যেতে পারেননি। দুদফা ডাক্তার দেখিয়েছেন। এ ব্যাপারেও তারেক নেতাকর্মীদের পরিষ্কার কিছু বলেননি। বেশ কিছু শপিং করেছেন। এরপর আর বেগম জিয়াকে প্রকাশ্যে দেখা যায় নি। এমনকি ঈদের পর থেকে ঢাকায় দলের নেতাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা এখন শুধু তারেক জিয়াই দিচ্ছেন। দলে নিয়মিত যাঁরা বেগম জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন, ঈদের পর থেকে তাঁদের কেউই কথা বলতে পারেননি। দলের মধ্যে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নেওয়ার জন্যই কি তারেক বেগম জিয়াকে আটকে রেখেছেন? এ ব্যাপারে দলের চেয়ারপার্সনের এখনই ঘোষণা চাইছেন তারেক? লন্ডন থেকে ঢাকায় এলে এমন ঘোষণা দলের সিনিয়র নেতাদের চাপে বেগম জিয়া নাও দিতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন তারেক জিয়া। নাকি অন্য কোনো কারণ, তা স্পষ্ট নয়। তবে, লন্ডনে বেগম জিয়ার অন্তরাল ঢাকায় এবং লন্ডনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এসব প্রশ্ন উঠছে বিএনপি থেকেই।
সুত্রঃ- বাংলা ইনসাইডার