
ঈদের পর বিএনপি রাজধানীতে মহাসমাবেশের মাধ্যমে ‘সরকার হটানোর’ আন্দোলন শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই আন্দোলন জোরদার করতে ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় বেগম খালেদা জিয়ার কয়েকটি সমাবেশ করার চিন্তা করা হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে বাধা এলে সরাসরি হরতাল এবং অবরোধে যাবে বিএনপি। খালেদা জিয়া ইতিমধ্যে দলের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে রেখেছেন। ঈদের পরপরই দলের স্থায়ী কমিটি ও জোটের বৈঠকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। গতকাল রাতে পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব গেছেন খালেদা জিয়া। ঈদের একদিন আগে তার দেশে ফেরার কথা। সেখানে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আসছেন। আন্দোলন কর্মপন্থা নিয়ে তাদের মধ্যে কথা হবে।
গতকাল বেগম জিয়ার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতা ও স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। এই নেতারা মনে করেন আন্দোলন হঠাত্ করেই তুঙ্গে তোলা যাবে না। ধাপে ধাপে ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। মূলত সমাবেশ করে এবং গণঅবস্থানের মত কর্মসূচি দিয়ে কর্মীদের আবারো আন্দোলনের মাঠে আনা হবে। শান্তিপূর্ণভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে এক ধরনের ‘ওয়ার্ম-আপ’ হবে নেতাকর্মীদের। সরকার কর্মসূচিতে বাধা না দিলে আগামী কোরবানীর ঈদ পর্যন্ত এভাবেই চলবে। অতঃপর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চূড়ান্ত ‘আল্টিমেটাম’ দেবেন খালেদা জিয়া। আল্টিমেটাম না মানলে কোরবানী ঈদের পরেই কঠোর আন্দোলন শুরু করতে চায় দলটি। নেতারা বলছেন, সরকার আন্দোলন ঠেকানোর জন্য যে যে ‘কঠোর’ পদক্ষেপ নেবে তা জেনে-শুনেই মাঠে নামবেন নেতারা। সরকারের পদক্ষেপের পাল্টা ব্যবস্থা কি নেয়া যায় তা নিয়ে দলের বিভিন্ন ফোরামে নানাভাবে আলোচনা হয়েছে।
খালেদা জিয়া মাহে রমজান শুরুর পর প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন ইফতারে যোগ দিয়ে ঈদের পর তাঁরা সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। সবাইকে রাজপথে নামারও আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেছেন, অহিংস আন্দোলন হবে। আন্দোলন মানে মারধর, জ্বালাও-পোড়াও নয়। ঈদের পরে আমাদের আন্দোলন হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক। তিনি বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি, ঈদের পর আওয়ামী লীগও পাল্টা রাজপথে নামবে। আপনারা রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভালো। তবে পুলিশ ও গুণ্ডা বাহিনী নিয়ে অস্ত্র হাতে রাজপথে নামবেন না। এটা করা হলে পাল্টা জবাব দেয়া হবে। এর পরিণতি ভালো হবে না।
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেছেন, ছাত্রদল, যুবদল,স্বেচ্ছাসেবক দলের মতো আন্দোলনের ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ গুলোকে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র রাজধানীতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র ব্যর্থতার পটভূমিতে ঢাকা মহানগর বিএনপি ভেঙ্গে মির্জা আব্বাস এবং হাবিবুন নবী খান সোহেলকে দিয়ে শুক্রবার নতুন আহবায়ক কমিটি করেছেন বেগম জিয়া। খালেদা জিয়া নেতাদের জানিয়েছেন,’ছাত্রদল,যুবদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলকে আন্দোলন উপযোগী করে নতুন নেতৃত্ব এনে কমিটি দেয়া হবে ঈদের পর। যোগ্য ও সাহসী নেতাদের দিয়ে এসব সংগঠন পুনর্গঠন হবে।’
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, দল প্রস্তুত আছে। দেশের মানুষও প্রস্তুত। আন্দোলন শুরু হবে। বিজয় জনগণেরই হবে। তিনি বলেন, ঈদের পর নতুন গতিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামবে বিএনপি। নতুন নির্বাচন আয়োজন ও দল গোছানোর জন্য সকল ধরনের পরিকল্পনা বিষয়ে কাজ চলছে। নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই বিএনপি আন্দোলনে বিশ্বাসী।
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আন্দোলন হবে। প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। আন্দোলনের জন্য দলের নেতাকর্মীদের কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
মহানগর বিএনপির নতুন আহবায়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ঈদের পর বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন হবে অহিংস ও শান্তিপূর্ণ। আশা করবো আমাদের অহিংস আন্দোলন সরকার দমন করার চেষ্টা করবেন না। দমনের চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগ যে ভাষায় কথা বলবে জনগণ সে ভাষাতেই জবাব দেওয়া অধিকার রাখে।
নবগঠিত মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে আমরা যে আন্দোলন শুরু করেছিলাম তা এখনও বলবত্ আছে। ম্যাডামের নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদের পর আন্দোলন হবে । সে আন্দোলনে ঢাকার জনগণ বিজয়ী হবে।