রাজধানীতে বিএনপির বাঘা বাঘা নেতা থাকলেও তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আত্মগোপনে থাকা এসব নেতাকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন কর্মীরা। কীভাবে তাদের বের করা যাবে, সেটাই ভাবছেন ঢাকার বাইরের উপেক্ষিত তৃণমূলের নেতারা।
এর আগে অনেক নেতা বড় বড় বুলি আওড়ালেও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে চলমান সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলন বিশেষ করে হরতাল, অবরোধে রাজধানীর কোথাও তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ঢাকার নেতাদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা হায়ার করে ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনের জন্য চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের তৃণমূল নেতারা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মহানগর নেতাদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থাকার জন্য তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরও তারা মাঠে নামেননি। এ কারণে তিনি ক্ষুব্ধ। তার যত চিন্তা ঢাকা মহানগর বিএনপি নিয়ে। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও ক্ষোভ প্রকাশ করে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, কেউ মাঠে না নামলে তিনি নিজেই মাঠে নামবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশে বিএনপির সাংগঠনিক ইউনিট ৭৪টি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগর। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা। সদস্য সচিব আবদুস সালাম। অন্য যুগ্ম আহ্বায়কদের মধ্যে রয়েছেন-সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু, সাবেক কমিশনার আবুল বাশার, এস এ খালেক, আজিজ উল্লাহ, মো. মোহন, বজলুল বাসিত আঞ্জু, এম এ কাইয়ুম, আবদুল আলীম নকি, নুরুল হুদা, আবু সাঈদ খান খোকন, আতিক উল্লাহ আতিক, সাজ্জাদ জহির ও মো. সাহাবুদ্দিন। এদের মধ্যে কেবল সাদেক হোসেন খোকা জেলে। সাবেক কমিশনার আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার দুই দিন আগে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। অন্যরা গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। হরতাল, অবরোধের প্রথম দিকে ঢাকায় যান চলাচল কিছুটা কম থাকলেও এখন যানজট লেগে যায়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ছাড়াও সাধারণ মানুষ ব্যাপক হাসি ঠাট্টা করে। তবুও নেতাদের হুঁশ ফিরছে না বলে অভিযোগ করেন কর্মীরা।
ঢাকার তৃণমূল নেতারা বলেন, ঢাকা মহানগরের নেতারা নাকি এক-একটা বাঘ, এমন গল্প শোনা যেত। কিন্তু তারা এখন বিড়াল হয়ে গেছেন। মহানগর নেতাদের নাম এলে প্রথমেই শোনা যায় সাদেক হোসেন খোকা ও মির্জা আব্বাসের কথা। এদের মধ্যে সাদেক হোসেন খোকা সম্প্রতি র্যাবের হাতে উত্তরা থেকে গ্রেফতার হন। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর মহানগর বিএনপি হরতালের ডাক দিলেও ঢাকা শহরে কোথাও একটি মিছিল হয়নি। এর আগে তিনি গ্রেফতার হলেও ঢাকায় কেউ একটি মিছিলও করেনি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় খোকা সংস্কারপন্থী ছিলেন। এজন্য নাকি কেউ তার কথা শোনে না। তিনিও জোর গলায় কাউকে কিছু বলতে পারেন না।
ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা জানান, এরপর আসে মির্জা আব্বাসের নাম। সাদেক হোসেন খোকা গ্রেফতার হলেও তিনি কিছু করবেন, এমন আশা তাদের ছিল। তাকেও রাজপথে কোথাও দেখা যায় না। আত্মগোপনে চলে গেছেন তিনি। তার এলাকা খিলগাঁও, সবুজবাগ, মতিঝিল থানায় কমিটি নেই দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে। এ নিয়ে মহানগর নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, কেরানীগঞ্জে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাভারে যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমানকেও পাওয়া যায় না। একদিন গাবতলীর আমিন বাজারে নেমেছিলেন আমান উল্লাহ আমান। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। গয়েশ্বর রায়কে কোনো হরতাল-অবরোধে রাজপথে দেখা যায়নি।
ঢাকা মহানগর বিএনপির এক বিক্ষুব্ধ নেতা জানান, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থী ছিলেন। সে সময় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালাও মেরেছিলেন। তত্কালীন মহাসচিব মরহুম অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে কার্যালয়ে ঢুকতে দেননি। এরপর আবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাকে মহানগর বিএনপির দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্ব পেয়ে তিনি ওয়ান ইলেভেনের পরীক্ষিত নেতাদের ধীরে ধীরে বিএনপি থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি মহানগর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পরীক্ষিত নেতাদের তালিকা পুলিশের কাছে সরবরাহ করেছেন। আর ওই তালিকা ধরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করছে নেতাকর্মীদের।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই নেতা জানান, নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হরতাল, অবরোধে মিছিল করে জামায়াত-শিবির। কিন্তু বিএনপির কেউ মিছিল করতে উদ্যোগী হচ্ছে না।
ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকায় থাকেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন আহমেদ। তার এলাকায় হরতাল, অবরোধে তিনি মাঠে নামেন না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার এলাকার যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে তার দুই ছেলেকে দুই থানার দায়িত্ব দিতে চান। তার ছেলেরা যেমন মাঠে নামেন না, তেমনি রাগে-ক্ষোভে অন্য নেতারাও মাঠে। নামেন না
মিরপুরে এসএ খালেকও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। অথচ হরতাল, অবরোধে তিনিও মাঠে নামেন না।
বাড্ডা এলাকায় থাকেন যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ কাইয়ুম। তিনি সরকার দলীয় সংসদ সদস্য রহমত উল্লাহর ছেলে ছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার ব্যবসায়িক পার্টনার। হরতাল-অবরোধেও তিনি নাকি অফিস করেন।
লালবাগের নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু কারাবন্দি রয়েছেন বলে রক্ষা। তিনি জেলে না থাকলে কী করতেন কে জানে। তবে তেজগাঁও এলাকায় সাহাবুদ্দিন, পুরান ঢাকার আবুল বাশার, মো. মোহন, মিরপুরের বজলুল বাসিত আঞ্জু, গুলশানের আবদুল আলীম নকি, ধানমণ্ডির আবদুল লতিফ, ডেমরার আতিক উল্লাহ আতিক, মতিঝিলের সাজ্জাদ জহির, সবুজবাগের নুরুল হুদাদের রাজপথে খুঁজে পাওয়া যায় না বলেই মাঠকর্মীদের অভিযোগ।