বাড়ি ভাড়ার নামে মালিক খুনে ‘সিরিয়াল কিলার’ সর্বশেষ শিকার নাখালপাড়ায় এক বৃদ্ধা, মামলা হস্তান্তর ডিবিতে

জনতার নিউজ

88

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়ায় বাসায় ঢুকে বাড়ির মালিক বৃদ্ধা আমেনা বেগমকে গলা কেটে হত্যার সঙ্গে সেই ‘সিরিয়াল কিলার’ সংশ্লিষ্ট বলে পুলিশ মনে করছে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (অভিযান) আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রায় এক মাস তদন্ত করে এ ঘটনাটির কোনো ক্লু পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। তবে হত্যার ঘটনার আলামত বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে, এর পেছনে আলোচিত ‘সিরিয়াল কিলার’ জড়িত থাকতে পারে। উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকায় ঘটে যাওয়া সেইসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বৃদ্ধা আমেনা বেগমের খুনের ঘটনার শতভাগ মিল রয়েছে। এরপরও মামলাটি আরো তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে স্থানান্তর করা হয়েছে।’

গত ৮ই মার্চ দুপুরে তেজগাঁও থানাধীন পশ্চিম নাখালপাড়ার ২৮৮ নম্বর ‘রসুল ভিলা’ নামে পাঁচতলা বাড়িতে কে বা কারা বাসা ভাড়ার নাম করে বাড়ির দ্বিতীয় তলায় যায়। পরে বাড়ির মালিক আমেনা বেগম (৬০)  তাদের নিচতলায় ডানপাশের ফ্ল্যাট দেখাতে নিচে নামেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে মহাখালীর একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্করা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে হত্যাকারীরা তাকে হত্যার পর  গলায় থাকা ১টি ভারি সোনার মালা, ১ জোড়া বালা ও ২টি আংটি নিয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, এ ঘটনায় নিহতের ছোট ছেলে বাবু আহমেদ বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত ৩/৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (অভিযান) আমিনুল ইসলাম জানান, কী কারণে ওই বৃদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে তা জানা যায়নি। যে বাড়িতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল ওই বাড়ির গলির মধ্যে কোনো সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল না। মূল সড়কে একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু, সেখানে কোনো সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা যায়নি। এছাড়া নিহত বৃদ্ধার পরিবারের সকল সদস্যের মোবাইল ফোন নম্বর যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তাতে কোনো সন্দেহজনক তথ্য মিলেনি।

এর আগে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় ২০১৬ সালে ঘটে যাওয়া পৃথক চারটি খুনের ঘটনার তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে ঘাতক সিরিয়াল কিলার। ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই উত্তরার দক্ষিণখানের উত্তর গাওয়াইরে বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে গৃহকর্ত্রী শাহিদা বেগমকে (৫০) হত্যা করে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায় অজ্ঞাত ওই সিরিয়াল কিলার। দুর্বৃত্ত ওই বছরের ২১ আগস্ট দক্ষিণখানের তেঁতুলতলা রোডে গৃহকর্ত্রী সুমাইয়া বেগমকে (৫২) একই কায়দায় হত্যা করেছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। এরপর ওই বছরের ৩১ আগস্ট দক্ষিণখানের মুন্সী মার্কেট এলাকায় জেবুন্নিছা চৌধুরীকে (৫৬) কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। একই কায়দায় এরপর এই খুনি খুন করে ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণখানের উত্তর গাওয়াইরে গৃহকর্ত্রী ওয়াহিদা আক্তারকে (৪৮)।

এসব খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর এখনও কোনো কুলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ প্রতিটি ঘটনার তদন্তে দেখতে পেয়েছে, খুনি একইভাবে নারীদের খুন করেছে। এসব খুনের ঘটনায় সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজ পুলিশ তদন্ত করে দেখতে পেয়েছে, ঘাতকের বয়স ৩০-এর কাছাকাছি। উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। গায়ের রং ফর্সা। মাথার চুল ছোট। কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো। খুনের পর অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কৌশল তদন্ত করে পুলিশ ধারণা করছে ঘাতক একজন সিরিয়াল কিলার।

নিহত বৃদ্ধা আমেনা বেগমের ছেলে বাবু আহমেদ গতকাল বলেন, কারও সঙ্গে আমাদের শত্রুতা নেই। পারিবারিক বিরোধও নেই। সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। কিন্তু, কোনো কারণে আমার মাকে এভাবে হত্যা করা হলো তা জানতে পারলাম না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here