

পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের জেরে ফারুক হোসেন কামাল নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় কাফরুল থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন আত্মসমর্পনের পর কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এই নির্দেশের পরপরই কোর্ট হাজত থেকে পালিয়ে যান কাফরুল থানার সাবেক এসআই রেজাউল করিম পাটোয়ারী। তবে অপর দুই আসামী কাফরুল থানার সাবেক এসআই মো. নুরুজ্জামান ও সোর্স বাবু ওরফে রতন ওরফে বাবু মিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার অপরাধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত। এর মধ্য দিয়ে মামলায় বিচার শুরু হল।
পুলিশের উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুজ্জামান জানান, আদালতের হাজতখানা থেকে পালিয়ে গেছেন এসআই রেজাউল করিম পাটোয়ারী। তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
রবিবার ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আকতারুজ্জামান আসামিদের জামিন আবেদন নাকচ করেন। পরে সরাসরি হত্যার অভিযোগ গঠন করেন। যদিও আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিটে দন্ডবিধির ৩০৪ ধারায় (অপরাধজনক প্রাণনাশ) অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে আসামিদের বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যার অভিযোগ পড়ে শোনালে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বিচার চান। এ সময় তারা হৈহুল্লোড় করেন।
আদালতের নথি সুত্রে জানা গেছে, আসামিরা হাইকোর্ট থেকে প্রথম জামিন নেন। পরে চার্জশিট দাখিল না হওয়া পর্যন্ত জামিন দেয়া হয়। গত ১ মার্চ সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মাজহারুল হক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। থানায় পুলিশের হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের ফলে মৃত্যুর অভিযোগে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকার সিএমএম আদালতে হত্যার অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত ফারুকের বড় বোন পারভীন হক। পরে ৬ নভেম্বর আদালত মামলাটিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য কাফরুল থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
নিহত ফারুক হোসেন কামাল চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার সাহেবগঞ্জ গ্রামের মৃত জামাল হকের ছেলে। রাজধানীর কাফরুল এলাকায় থেকে সাব-কন্ট্রাকে কাজ করতেন। ২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আসামি এসআই নুরুজ্জামান ও সোর্স রতন কাফরুলের ভান্ডারি স্টিলের দোকান থেকে ফারুক হোসেনকে মামলা আছে বলে কাফরুল থানায় নিয়ে যায়। ওই দিন রাত ১১টায় বাদী থানায় গেলে থানা হাজতে তার ভাইয়ের চিৎকার শুনতে পান। পুলিশকে ম্যানেজ করে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করলে ফারুক আসামি এসআই নুরুজ্জামান ও সোর্স রতনকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে বলেন। টাকা না দিলে মেরে ফেলবে বলে জানান।
বাদী পুরো টাকা দিতে না পারায় ২১ ফেব্রুয়ারি ফারুককে কাফরুল থানার ৫৭(২)১২ নম্বর মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আসামির শরীরে জখমের চিহ্ন দেখে রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত। ২২ ফেব্রুয়ারি কারাগারে ফারুক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে তার রক্তবমি হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হলে সেখানে রাত সাড়ে ১১টায় মারা যায়।