ফাঁসির আসামির ডোরাকাটা সাদা পোশাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ৮নং সেলে (রজনীগন্ধা) রাখা হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সদ্য ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে (সাকা চৌধুরী)। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে যাওয়ার পর পরই তার ফাঁসির দণ্ডাদেশের রায় শুনিয়ে পরনের পোশাক জব্দ করে তাকে পরানো হয় ফাঁসির আসামির পোশাক। ফাঁসির আসামির পোশাক পরানোর সময়ে চোখ বড় করে মুখ ভেংচি বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে কনডেম সেলে প্রবেশ করেন সাকা চৌধুরী। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
মঙ্গলবার দুপুর প্রায় সাড়ে তিনটা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য সাকা চৌধুরীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে একটি প্রিজন ভ্যানে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ৮নং সেলে (রজনীগন্ধা) অন্য কোন আসামি বা কয়েদীর সঙ্গে তার দেখা হওয়ার সুযোগ নেই। ফাঁসির সেলের সামনে সারাক্ষণ ডিউটিতে থাকেন পালাক্রমে একজন কারারক্ষী। একজন তৃতীয় শ্রেণীর কয়েদীর মতোই দেয়া হয় প্রাত্যহিক খাবার। ঘুমানোর জন্য আছে মাত্র একটি কম্বল। গায়ে দেয়ার জন্য একখানা চাদর। ফাঁসির সেলের বাইরের কারও সঙ্গে তার কথা বলা বা সাক্ষাত করার কোন সুযোগ নেই।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামিদের ক্ষেত্রে কারাবিধি অনুযায়ী যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সাকা চৌধুরীর ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কারাগারে এসে পৌঁছামাত্রই আমরা এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করে সাকা চৌধুরীকে প্রিজন ভ্যানে পুলিশী পাহারায় নেয়া হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সাড়ে তিনটায় তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। এর আগের দিন তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয় রাত প্রায় সাড়ে নয়টায়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার জন্য তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে ফাঁসির আসামি আছে ২৫ জন। সাকা চৌধুরীকে নেয়ার পর ফাঁসির আসামি দাঁড়িয়েছে ২৬। ফাঁসির আসামিদের রাখা হয়েছে ফাঁসির সেলে। অপেক্ষাকৃত কম আলো-বাতাসের মধ্যে কোন রকমে থাকার মতো একটি কক্ষে রাখা হয় ফাঁসির আসামিদের। সাকা চৌধুরীকেও ফাঁসির অন্য কয়েদীর মতো রাখা হলেও তার ক্ষেত্রে বাড়তি নিরাপত্তা ও নজরদারি করা হচ্ছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তার রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাকা চৌধুরীকে কারাগারে আনার পর স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা দেখানো হলেও তিনি ছিলেন খুবই উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। তার ফাঁসির রায়ের পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী তেমন কোন বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়ায় তিনি তার দল বিএনপির প্রতি মারাত্মক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিএনপির প্রতি ব্যঙ্গোক্তির প্রতিক্রিয়ায় হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছে সাকা চৌধুরী।