জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আমাকে হুমকি দেবেন না। বোমা মেরে আমাদের অহেতুক ভয় দেখাবেন না। ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হয়। সেই পাটকেল মারার শক্তি আমাদের আছে। সাহস থাকলে সামনে আসুন। আমি সেনাপতি ছিলাম, আমি সৈনিক। কাকে ভয় দেখান, কিসের ভয় দেখান।’ জাতীয় যুবসংহতির উদ্যোগে আজ শনিবার রাজধানীর বিজয়নগরে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের গণ-সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
এরশাদ বলেন, ‘বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে। আমার মন বলছে—আসতে তারা বাধ্য হবে। কারণ, ক্ষমতায় যেতে হলে নির্বাচন ছাড়া আর কোনো পথ নেই। শুনছি—বিএনপি নির্বাচনে আসার কথা ভাবছে। এত আন্দোলন, গাড়ি ভাংচুর, মানুষ পুড়িয়ে মারার পর নির্বাচনে এসে মানুষকে মুখ দেখাবেন কী ভাবে? আমি আমার দল করি, আপনারা আপনাদের দল করেন। আপনারা চাইলে নির্বাচনে না-ও আসতে পারেন, কিন্তু আমি নির্বাচনে গিয়ে আপনাদের কী ক্ষতি করলাম!’
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—উভয়ের সমালোচনা করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘মানুষ দুই মহিলার হাত থেকে মুক্তি চায়। দুই দলের কারণে মানুষ নিষ্পেষিত। তাদের রাহু থেকে দেশকে মুক্ত করতেই জাপা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার জালেম, অত্যাচারী ও দুর্নীতিবাদ। এই সরকারকে উত্খাত করার একমাত্র পথ নির্বাচন। সে কারণেই জাপা নির্বাচনে যাচ্ছে। বিএনপিকে বলবো—সাহস থাকলে আপনারাও নির্বাচনে অংশ নিন, জনতার রায় নিন।’
বিএনপির উদ্দেশে এরশাদ বলেন, ‘আপনারা আমার বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল করছেন। ইচ্ছা করলে আমরাও তা করতে পারি কিন্তু আমরা অসভ্য নই। আমাদের পথে বাধা সৃষ্টি করবেন না। কী ভাবে প্রতিরোধ করতে হয়, আমরা জানি। আমাদের দুর্বল ভাববেন না। কত বোমা মারবেন—আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত। আজ এখানে যে নেতা-কর্মী দেখছেন, এটা নমুনা দেখালাম। যদি দেখতে চান, আরও দেখাব। আমাদেরও লাখ-লাখ কর্মী রয়েছে। বোমা মেরে আমাদের পথ রুদ্ধ করতে পারবেন না। বরং জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে আপনাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ চিরকালের জন্য রুদ্ধ হয়ে যাবে। আমি আপনাদের কারো সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ নই—আমি ১৬ কোটি মানুষের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। জাপা আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বলেই আপনাদের এত গাত্রদাহ।’
মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়ার পর জাপাকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে এরশাদ বলেন, ‘জাপায় ক্ষোভের নয়, আনন্দের ঝড় বইছে। কাজী জাফর আহমদ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করছেন। তিনি কিসের দল করবেন, এটা হাস্যকর।’
অনুষ্ঠানে জাপা মহাসচিব এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আশা করি—তারাও শান্তির পথে ফিরে আসবে। বিপথগামী বন্ধুদের বলব—আমরা শান্তি চাই, আমাদের আক্রমণ করবেন না। অন্যথায় আমরাও প্রতিরোধ গড়ে তুলব। যুবসংহতির সভাপতি অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের, পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সালমা ইসলাম প্রমুখ।