‘আমেরিকার পণ্ডিতির দরকার নেই’

15

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পরামর্শ রেখেছেন ক্ষমতাসীন মহাজোটের সংসদ সদস্যরা।

 

সংসদের রোববারের অধিবেশনে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ ডেমোক্রেসি’ উপলক্ষে এক আলোচনায় আওয়ামী লীগ ও জাসদের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দেন।

আগামী নির্বাচন নিয়ে মতভেদ দূর করতে দুই প্রধান নেত্রীকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির চিঠি নিয়ে এই প্রতিক্রিয়া দেখান আওয়ামী লীগের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, আব্দুল মতিন খসরু ও জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল।

জাসদের কার্যকরি সভাপতি বাদল বলেন, “দেশে সংবিধান আছে, ভাইব্রেন্ট পার্লামেন্ট আছে। বিশ্বের কোনো পণ্ডিতের পণ্ডিতি করার দরকার নেই।

“যে সাদা চামড়ারা আমাদের নসিহত করছেন, তারা ভাবলেন- সিরিয়ানরা সিরিয়ানদের মারছেন, চলেন আমরা কিছু সিরিয়ান মেরে আসি।”

“যারা আলোচনার পরামর্শ দেন। তারা আমাদের দেশের ইতিহাস জানেন। আমাদের ইতিহাস জেনে অযাচিত পরামর্শ দেবেন না,” বলেন বাদল।

যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, “আমেরিকায় এফবিআই যখন কথায় কথায় লাংটো করে পেটায়- তখন গণতন্ত্র কোথায় থাকে?”

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “যারা পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করেন, তারা অস্ত্র বিক্রির জন্য যুদ্ধ লাগিয়ে রাখেন, তারা জাতিসংঘকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই জানেন না, জাতিসংঘের কোন সিদ্ধান্ত কবে নেয়া হয়েছিল।”

সাবেক আইনমন্ত্রী মতিন খসরু, “আমেরিকা যেখানে সেখানে হামলা করে। তাদের সে অধিকার কে দিল? আমেরিকা গণতন্ত্রের শেষ আশ্রয়স্থল না।”

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “যারা ওপর থেকে কথা বলছেন, তাদের মতলবও পরিষ্কার না। মিশরে গণতন্ত্র এল, কী এক কথা বলে তাদের সরিয়ে দিলেন। আবার সিরিয়ায় জাহাজ পাঠিয়ে দিলেন। যেই রাশিয়া জাহাজ পাঠিয়ে দিলে, তখন বললেন- আসুন আলোচনা করি।”

বিরোধীদলীয় নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আপনারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সমর্থন দিয়েছেন। জঙ্গিবাদীদের সমর্থন দিয়েছেন। শরীরে ২৬টা গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে কথা বলছি।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ বলেন, “সারা পৃথিবীতে যেভাবে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তিত, সেভাবেই এগিয়ে যেতে হবে। সংবিধান অনুযায়ীই আগামী নির্বাচন হবে।”

বিরোধী দলের দাবি প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, “কেয়ারেটেকার, তত্ত্বাবধায়ক, নির্দলীয় বা সর্বদলীয় সরকারের আর কোনো সুযোগ নেই। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে সাংবিধানিক সরকার রাখতে হবে।”

কামাল হোসেনের উদ্দেশ্যে শেখ সেলিম বলেন, “আপনি কি বাহাত্তরের সংবিধানের প্রণেতা ছিলেন? আপনি কি তিয়াত্তরের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন? আপনি কীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে থাকেন?”

আমির হোসেন আমুও বর্তমান সংবিধান অনুসরণ করে নির্বাচনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, “সাত হাজার ভোট হয়েছে, একটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। তাহলে কিসের জন্য আন্দোলন?”

এই আলোচনায় আরো অংশ নেন ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগের আলী আশরাফ, ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, ফজলে রাব্বী মিয়া, আব্দুর রহমান।

‘নির্বাচনের ব্যত্যয় হলে বিপক্ষের শক্তি খুশি হবে’

অধিবেশনের আগে সংসদ ভবনে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ ডেমোক্রেসি’র এক আলোচনা সভায় সংসদ সদস্যরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ওপর জোর দেন।

আওয়ামী লীগের ফজলে রাব্বী মিয়া ওয়ান-ইলেভেনের অভিজ্ঞতা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, “আমাদের এমন কোনো কাজ করা উচিত হবে না, যাতে অন্য কোনো অগণতান্ত্রিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। সিভিল সোসাইটি এবং মিডিয়ার এমন কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না, যাতে গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত হয়।”

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সরকারি প্রতিশ্রুতি কমিটির সভাপতি আলী আশরাফ বলেন, “গণতন্ত্র সম্পর্কে জনগণকে বোঝাতে হবে। গণতন্ত্র আরেকবার হুমকির সম্মুখীন হলে দুর্গতি আছে।”

বিএনপির মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “গত ৪২ বছরে আমরা রাজনীতিবিদরা নির্বাচন পদ্ধতি ঠিক করতে পারলাম না। এটা আমদের জন্য লজ্জার। বাংলাদেশে নামে গণতন্ত্র আছে। সরকারি ও বিরোধী দল একে অপরকে বিশ্বাস করেন না।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী বলেন, “পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধের অভাবে আমাদের গণতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে না। আমাদেরকে এবিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য ম্ঈনুদ্দিন খান বাদল, আব্দুল ওয়াদুদ, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here