ম্যাচ ও স্পট ফিক্সিংয়ের দায়েই এখন নিষেধাজ্ঞায় আছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও এক সময়ের দেশের শীর্ষ ক্রিকেট তারকা মোহাম্মদ আশরাফুল। তার বিপক্ষে এতোদিন মূলত জানা অভিযোগ ছিল যে, তিনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় আসরে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের হয়ে দুটি ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ ছাড়া আইসিসির দুর্নীতি দমন ও নিরাপত্তা ইউনিটের (আকসু) কাছে তিনি জাতীয় দলের হয়েও কিছু অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছিলেন বলে গুঞ্জন ছিল। এবার শ্রীলঙ্কান একটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা বলেছে, আকসুর কাছে দেওয়া জবানবন্দীতে আশরাফুল সেদেশের স্বল্পস্থায়ী টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট এসএলপিএলেও ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়িত থা্কার কথা স্বীকার করেছিলেন!
২০১২ সালে অনুষ্ঠিত এসএলপিলের একমাত্র আসরে আশরাফুল খেলতে গিয়েছিলেন রুহুনা রয়্যালসের হয়ে। শ্রীলঙ্কার পত্রিকা ডেইলি মিরর এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে গতকাল দাবি করেছে, রুহুনার সঙ্গে ওয়াইয়াম্বা ইউনাইটেডের ম্যাচ পাতানো ছিল। আর এই পাতানোর সঙ্গে আশরাফুল নিজের সম্পৃক্ত থাকার কথা আকসুর কাছে বলেছেন।
আশরাফুল সম্পর্কে প্রথম অভিযোগটা বাজারে আসে সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে। এদিকে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের দুটি ম্যাচ নিয়ে বিসিবির নিয়োজিত সংস্থা হিসেবে তদন্ত শুরু করে আকসু। তাদের তদন্তের এক পর্যায়েই জবানবন্দীতে নিজের সব অপরাধ স্বীকার করে নেন আশরাফুল; সঙ্গে বাড়তি অনেক তথ্যও যোগ করেন। এসবের ভিত্তিতেই বিসিবির গঠিত ডিসিপ্লিনারি কমিটির ট্রাইবুন্যাল আশরাফুলকে প্রথম দফায় আট বছরের নিষেধাজ্ঞা দেন। পরে কমিটির কাছে আপিল করে যা আবার পাচ বছরে কমে আসে। এই মামলায় আরও শাস্তি পান ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের মালিক এবং নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার লু ভিনসেন্ট ও শ্রীলঙ্কার কৌশল লুকুরুয়াচ্চি। বাকী অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পান। এর বিপক্ষে আবার ক্রীড়া আদালতে গেছে বিসিবি ও আইসিসি।
এমন অবস্থায় শ্রীলঙ্কান পত্রিকাটি দাবি করছে, আশরাফুল আকসুর কাছে এসএলপিএলে ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছিলেন। যেটা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের কার্যনির্বাহী কমিটিকে না জানালেও জানতেন তখনকার সভাপতি জয়ন্ত ধর্মদাসা। তিনি কেন এ নিয়ে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের সঙ্গে খোলাখুলি আলাপ করেননি, সে নিয়েই এখন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাঙ্গন। আর সেই সূত্রেই বেরিয়ে এসেছে আশরাফুলের পুরোনো সম্পৃক্ততার কথা।
আশরাফুল নাকি দাবি করেছেন, এসএলপিএলে এই ম্যাচ পাতানোয় তাকে সম্পৃক্ত করেছিলেন গৌরব রাওয়াত। এই গৌরব রাওয়াত ছিলেন ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের প্রধাণ নির্বাহী। যিনি আবার আশরাফুলের এসএলপিএল দল রুহুনারও প্রধাণ নির্বাহী ছিলেন। আর আশরাফুল-গৌরব চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন নাকি আরেক জুয়াড়ি; যার নাম আশরাফুল মনে করতে পারেননি। এই জুয়াড়ির কাছ থেকে আশরাফুল এর আগে জাতীয় দলের কিছু ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাবও পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে মিরর।
মিররের দাবি এসএলপিএলে ম্যাচ পাতানোর প্রমান তাদের হাতে আগে থেকেই ছিল। এ সংক্রান্ত কিছু মালিক বনাম জুয়াড়ির কথোপকথন তারা এর আগেই তদন্ত কমিটির কাছে হস্তান্তর করেছে বলেও দাবি করেছে।